এবিএনএ : ঢাকাসহ দেশের চারটি সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে। ফলে চার আসনের আসন্ন উপনির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে না দলটি।
রবিবার দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
নির্বাচন কমিশন ও সরকারের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়ায় এবং এই নির্বাচন কমিশনের অযোগ্যতা ও প্রতিটি নির্বাচনে সরকারের নগ্ন হস্তক্ষেপের কারণে আগামীতে লক্ষীপুর-২, সিলেট-৩, ঢাকা-১৪, কুমিল্লা-৫ আসনের উপনির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে বিএনপি।’
এখনো সিসিইউতে খালেদা জিয়া সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কেও কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার অবস্থা একই রকম আছে। তিনি সিসিইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। সিসিইউ থেকে বের হতে পারছেন না। চিকিৎসকরা অ্যালাউ করছেন না। তার ফুসফুসে এখনও পাইপ রয়েছে।
স্থায়ী কমিটির সভায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে অবগত করা হয়েছে বলেও জানান মহাসচিব।
সাংবাদিকের শর্ত সাপেক্ষে জামিন ফরমায়েশি রায়
সংবাদ সম্মেলনে অফিসিয়াল সিক্রেটস মামলায় সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের শর্তসাপেক্ষে জামিনের বিষয়টিকে ফরমায়েশি রায় বলে দাবি করেন বিএনপি মহাসচিব।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘অনির্বাচিত সরকারের দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশ করায় সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে বেআইনিভাবে পাঁচ ঘণ্টা আটক ও শারীরিক, মানসিকভাবে নির্যাতন এবং তথ্য চুরির মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার এবং জামিন না দেয়ার ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানানো হয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে। সভা মনে করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, সচিব, অতিরিক্ত সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অবিলম্বে বরখাস্ত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা উচিত।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘অতীত ঐতিহ্য অনুযায়ী আওয়ামী লীগ গণমাধ্যমবিরোধী দল। ১৯৭৫ সালে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা বাকশাল প্রতিষ্ঠা করে সকল পত্রিকা বন্ধ করে বাক স্বাধীনতা, লেখার স্বাধীনতা হরণ করে ছিল। সেই সময়ে পত্রিকা বন্ধ হওয়ার কারণে অসংখ্য সংবাদকর্মী বেকার হয়েছিলেন। আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর দৈনিক বাংলা, বাংলাদেশ টাইমস, আমার দেশসহ অনেকগুলো পত্রিকা, চ্যানেল ওয়ান, ইসলামিক টিভি, দিগন্ত টেলিভিশনসহ অনেক চ্যানেল বন্ধ করে দিয়েছে। ত্রাস ও ভীতির সন্ত্রাস তৈরি করে সত্য প্রকাশকে বাধাগ্রস্ত করছে।’
বিএনপি মহাসচিব অভিযোগ করে বলেন,‘প্রকৃতপক্ষে, গণমাধ্যমকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করছে তারা। মাহমুদুর রহমান, শফিক রেহমান, আবদুস সালাম, কনক সারওয়ার, মুনির হায়দার, ওলিউল্লাহ নোমানসহ অনেক বরেণ্য সাংবাদিক নির্যাতিত হয়ে কারাভোগ করেছেন। দেশ থেকে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন। সংগ্রাম সম্পাদক আসাদ, সাংবাদিক নেতা রুহুল আমীন গাজীসহ অনেক সাংবাদিক মিথ্যা মামলায় এখনও কারাগারে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সভা স্মরণ করিয়ে দেয় যে, ১৯৭৫ সালে আওয়ামী লীগ সকল পত্রিকা বন্ধ করে বাকস্বাধীনতা হরণ করেছিল। অন্যদিকে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সকল পত্রিকা চালু করে কথা বলার স্বাধীনতা ও লেখার স্বাধীনতাকে নিশ্চিত করেছিলেন বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। বেগম খালেদা জিয়ার শাসনামলে সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা আরও বিকশিত হয়েছিল। বিবিসি, সিএনএনসহ আন্তর্জাতিক চ্যানেলগুলো অনুমোদন পেয়েছিল।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট ১৯২৩ এর প্রয়োগ, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের মতো নিবর্তনমূলক আইন প্রণয়ন মুক্ত সংবাদিকতাকে ধ্বংস করছে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে সংকুচিত করেছে। সভায় অবিলম্বে সকল প্রকার কালো আইন বাতিলের দাবি জানানো হয় এবং আসাদ, রুহুল আমিন গাজী ও রোজিনা ইসলামসহ সকল আটক সাংবাদিকদের মুক্তির দাবি ও মামলা প্রত্যাহার দাবি জানানো হয়। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সকল বিভক্তি ভুলে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য সাংবাদিকদের আহ্বান জানানো হয়।’